ঢাকা: সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

Follow :

31°C
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ঠিকমতো খেতে পারতেন না, ছাত্রলীগ সভাপতি হয়ে কোটিপতি নিউটন

সময়ের কথা নিউজ ২৭ অক্টোবর ২০২৪, রবিবার, ২০:১৫ ৪ মিনিটে পড়ুন

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের গোপালগঞ্জ জেলার সভাপতি নিউটন মোল্লা। তার বাবা ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষক। ২০০৪ সালের দিকে নিউটনের বাবা মারা গেলে অভাব-অনটনে দিন কাটতো তাদের। জীবিকার তাগিদে পরিবারসহ গ্রাম ছেড়ে গোপালগঞ্জ শহরের একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন নিউটন। এরপর ছাত্ররাজনীতিতে পা রেখেই কোটিপতি বনে যান তিনি।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দেশের বিভিন্ন দপ্তরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডার হাতিয়ে নেওয়া, নিয়োগ-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, কমিশন বাণিজ্য করে শতকোটি টাকার মালিক হন তিনি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের হাত ছিল তার মাথার ওপর। সরাসরি দেখা করতেন শেখ হাসিনার সঙ্গেও।

সূত্র বলছে, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলমান নিউটন মোল্লার। এসব প্রকল্প থেকে কাজ না করেই প্রায় ৭০ শতাংশ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন।

জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালীন বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ফোনে হুমকি দিয়েছেন নিউটন মোল্লা। যার বেশ কয়েকটি কলরেকর্ড জাগো নিউজের হাতে এসেছে।

একাধিক সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নিউটন প্রথমে ছাত্রলীগের বিভিন্ন প্রোগ্রামে কর্মী হিসেবে যোগ দিতেন। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিএম শাহাবুদ্দিন আজমের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শাহাবুদ্দিন আজম ও শেখ সেলিমের ছেলে নাঈমের আশীর্বাদে সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। একই সূত্রের আশীর্বাদে ২০২১ সালে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। যদিও জেলা সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার আগেই কোটিপতি বনে যান তিনি।

সভাপতি হয়ে শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে যান নিউটন মোল্লা। জেলা শহরের বেদগ্রাম এলাকায় কোটি টাকা মূল্যের জমিতে বাড়ি করেছেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। যার বেশকিছু ছবি তার নিজ ফেসবুক আইডিতেও শেয়ার করেছেন তিনি।

বর্তমানে হত্যা মামলায় পলাতক নিউটন মোল্লা। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব রয়েছেন। করছেন সরকারের সমালোচনা। ছাত্রলীগের একাধিক নেতা বলেন, বর্তমান তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন অন্তর নামে তার এক কর্মীর কাছে রয়েছে।

নিউটনের গ্রামের বাড়ি উপজেলা সদরের বলাকইড় গ্রামে। ওই গ্রামরে একজন বৃদ্ধ (নিরাপত্তার জন্য নাম প্রকাশ করতে চাননি) বলেন, ‘নিউটনের বাবা ছিলেন স্কুলশিক্ষক। ছোটবেলায় তার বাবা মারা যান। ওইসময় ওদের খুব অভাব-অনটনে দিন কাটতো। ঠিকমতো খেতে পারতো না। এরপর গ্রাম ছেড়ে শহরের মৌলভীপাড়ায় গিয়ে একটি ভাড়া বাসায় ওঠে। এখন তো দেখি নিউটনের অনেক টাকা। শুনছি শত শত কোটি টাকা তাদের এখন।’

জেলা ছাত্রলীগের একজন নেতা বলেন, ‘নিউটন ভাই প্রথম থেকেই তেলবাজি আর চামচামি খুব ভালো পারতেন। যে কারণে তিনি আজমের ফোরামে সহজেই জায়গা করে নিয়েছিলেন। কলেজের জিএস থাকাকালীন বিভিন্ন দপ্তরে তদবির বাণিজ্য থেকে শুরু করে টেন্ডার বাণিজ্য করতেন। এই সময় নিউটন প্রচুর টাকা কামাইছেন। এরপর সভাপতি হওয়ার পর দেশব্যাপী বিভিন্ন দপ্তরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রকল্প হাতিয়ে নেওয়াসহ নিয়োগ-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, কমিশন বাণিজ্য করে শতকোটি টাকার মালিক এখন তিনি।’

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক আরেক নেতা বলেন, ‘শুধু সেলিম ভাই ও আজম ভাইয়ের কাছের লোক হওয়ায় যা খুশি তাই করেছেন নিউটন। তিনি যা করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতা সেটি করতে পারেননি। দেশের বিভিন্ন দপ্তরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অন্যের লাইসেন্স দিয়ে কাজ বাগিয়ে নিতেন। ফোন করে বলতেন, আমি গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, আমি আপার লোক। ওইসব দপ্তরের প্রধানরাও ভয়ে তাকে কাজ দিয়ে দিতেন।’

গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসের ম্যুরাল ও মেন গেটের কাজ নিউটন অন্যের নামে নিয়ে তিনি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা করছেন। যদিও কাজটি বছরের পর বছর ফেলে রেখেছেন।’

তিনি আরও বলেন, জুলাইয়ে আন্দোলন চলাকালীন আমাদের বেশ কয়েকবার ফোন করে হুমকি দিয়েছেন। আমরা ভয়ে তার প্রতিবাদ করিনি।

জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান বলেন, ‌‘আমাদের কাছে এখনো কোনো অভিযোগ পড়েনি। তবে কেউ অভিযোগ করলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।’

গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মো. সাজেদুর রহমান বলেন, ‘নিউটনের নামে হত্যা মামলা রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আশা করি দ্রুতই তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো।’

জনপ্রিয় বিষয়

জনপ্রিয় সংবাদ

ঠিকমতো খেতে পারতেন না, ছাত্রলীগ সভাপতি হয়ে কোটিপতি নিউটন

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের গোপালগঞ্জ জেলার সভাপতি নিউটন মোল্লা। তার বাবা ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষক। ২০০৪ সালের দিকে নিউটনের বাবা মারা গেলে অভাব-অনটনে দিন কাটতো তাদের। জীবিকার তাগিদে পরিবারসহ গ্রাম ছেড়ে গোপালগঞ্জ শহরের একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন নিউটন। এরপর ছাত্ররাজনীতিতে পা রেখেই কোটিপতি বনে যান তিনি।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দেশের বিভিন্ন দপ্তরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডার হাতিয়ে নেওয়া, নিয়োগ-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, কমিশন বাণিজ্য করে শতকোটি টাকার মালিক হন তিনি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের হাত ছিল তার মাথার ওপর। সরাসরি দেখা করতেন শেখ হাসিনার সঙ্গেও।

সূত্র বলছে, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলমান নিউটন মোল্লার। এসব প্রকল্প থেকে কাজ না করেই প্রায় ৭০ শতাংশ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন।

জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালীন বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ফোনে হুমকি দিয়েছেন নিউটন মোল্লা। যার বেশ কয়েকটি কলরেকর্ড জাগো নিউজের হাতে এসেছে।

একাধিক সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নিউটন প্রথমে ছাত্রলীগের বিভিন্ন প্রোগ্রামে কর্মী হিসেবে যোগ দিতেন। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিএম শাহাবুদ্দিন আজমের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শাহাবুদ্দিন আজম ও শেখ সেলিমের ছেলে নাঈমের আশীর্বাদে সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। একই সূত্রের আশীর্বাদে ২০২১ সালে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। যদিও জেলা সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার আগেই কোটিপতি বনে যান তিনি।

সভাপতি হয়ে শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে যান নিউটন মোল্লা। জেলা শহরের বেদগ্রাম এলাকায় কোটি টাকা মূল্যের জমিতে বাড়ি করেছেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। যার বেশকিছু ছবি তার নিজ ফেসবুক আইডিতেও শেয়ার করেছেন তিনি।

বর্তমানে হত্যা মামলায় পলাতক নিউটন মোল্লা। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব রয়েছেন। করছেন সরকারের সমালোচনা। ছাত্রলীগের একাধিক নেতা বলেন, বর্তমান তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন অন্তর নামে তার এক কর্মীর কাছে রয়েছে।

নিউটনের গ্রামের বাড়ি উপজেলা সদরের বলাকইড় গ্রামে। ওই গ্রামরে একজন বৃদ্ধ (নিরাপত্তার জন্য নাম প্রকাশ করতে চাননি) বলেন, ‘নিউটনের বাবা ছিলেন স্কুলশিক্ষক। ছোটবেলায় তার বাবা মারা যান। ওইসময় ওদের খুব অভাব-অনটনে দিন কাটতো। ঠিকমতো খেতে পারতো না। এরপর গ্রাম ছেড়ে শহরের মৌলভীপাড়ায় গিয়ে একটি ভাড়া বাসায় ওঠে। এখন তো দেখি নিউটনের অনেক টাকা। শুনছি শত শত কোটি টাকা তাদের এখন।’

জেলা ছাত্রলীগের একজন নেতা বলেন, ‘নিউটন ভাই প্রথম থেকেই তেলবাজি আর চামচামি খুব ভালো পারতেন। যে কারণে তিনি আজমের ফোরামে সহজেই জায়গা করে নিয়েছিলেন। কলেজের জিএস থাকাকালীন বিভিন্ন দপ্তরে তদবির বাণিজ্য থেকে শুরু করে টেন্ডার বাণিজ্য করতেন। এই সময় নিউটন প্রচুর টাকা কামাইছেন। এরপর সভাপতি হওয়ার পর দেশব্যাপী বিভিন্ন দপ্তরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রকল্প হাতিয়ে নেওয়াসহ নিয়োগ-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, কমিশন বাণিজ্য করে শতকোটি টাকার মালিক এখন তিনি।’

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক আরেক নেতা বলেন, ‘শুধু সেলিম ভাই ও আজম ভাইয়ের কাছের লোক হওয়ায় যা খুশি তাই করেছেন নিউটন। তিনি যা করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতা সেটি করতে পারেননি। দেশের বিভিন্ন দপ্তরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অন্যের লাইসেন্স দিয়ে কাজ বাগিয়ে নিতেন। ফোন করে বলতেন, আমি গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, আমি আপার লোক। ওইসব দপ্তরের প্রধানরাও ভয়ে তাকে কাজ দিয়ে দিতেন।’

গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসের ম্যুরাল ও মেন গেটের কাজ নিউটন অন্যের নামে নিয়ে তিনি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা করছেন। যদিও কাজটি বছরের পর বছর ফেলে রেখেছেন।’

তিনি আরও বলেন, জুলাইয়ে আন্দোলন চলাকালীন আমাদের বেশ কয়েকবার ফোন করে হুমকি দিয়েছেন। আমরা ভয়ে তার প্রতিবাদ করিনি।

জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান বলেন, ‌‘আমাদের কাছে এখনো কোনো অভিযোগ পড়েনি। তবে কেউ অভিযোগ করলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।’

গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মো. সাজেদুর রহমান বলেন, ‘নিউটনের নামে হত্যা মামলা রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আশা করি দ্রুতই তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো।’

জনপ্রিয় ক্যাটাগরি

জনপ্রিয় সংবাদ