তানভির আখতার সাকিব নামে ইংল্যান্ডে একটি সফটওয়্যার ফার্মে কর্মরত বাংলাদেশের একজন ২০১৮ সালে পড়তেন রাজশাহী সিটি কলেজে। ওই সময় ছাত্রলীগের মিছিলে যেতে বাধ্য করায় ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন তিনি। ওই একটি স্ট্যাটাস তার জীবনে কী কালো অধ্যায় নামিয়ে এনেছিলো, সেটা নিজেই বর্নণা করেছেন সম্প্রতি ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর। তানভিরের পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। রাজশাহী সিটি কলেজে ছাত্রলীগের নিয়মিত কার্যকলাপের অংশ হিসেবে, তারা প্রায়ই জোর করে ছাত্রছাত্রীদের মিছিলে অংশ নিতে বাধ্য করত। একদিন মেইন গেট বন্ধ করে ঘোষণা দিল, সবাইকে মিছিলে থাকতে হবে। বাধ্যতামূলক মিছিলে অংশ নিতে না চেয়ে গেটে দাঁড়িয়ে থাকা এক কর্মীর কাছে গিয়ে বললাম, “আমাকে বাসায় যেতে হবে।” কিন্তু সে আমার কথা না শুনে, উল্টো ধাক্কা দিয়ে আমাকে ভিতরে পাঠিয়ে দিল। প্রচন্ড রাগ হলো। বাসায় ফিরে ফেসবুকে লিখলাম, “ছাত্রছাত্রীদের জোর করে মিছিলে বাধ্য করা, গেট আটকে দাঁড়িয়ে রাখা—এটাই সিটি কলেজ ছাত্রলীগ।”
পোস্টটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে গেল। তখন আমাদের পরীক্ষা চলছিল। ১৪ই ফেব্রুয়ারি ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষার দিন। পরীক্ষা শুরুর ১৫ মিনিটের মাথায় ১৫-২০ জন ছাত্রলীগের কর্মী পরীক্ষার হলে ঢুকল। একজন জোরে জিজ্ঞেস করল, “তানভীর আখতার শাকিব কে?” আমি উঠে দাঁড়ালাম। তারা শিক্ষককে আমার উত্তরপত্র নিয়ে নিতে বলল। একজন বলল, “ওর পরীক্ষা শেষ, খাতা নিয়ে নেন।” তারপর দুইজন এসে আমাকে দুই পাশ থেকে ধরে হল থেকে বের করে কলেজ প্রাঙ্গণে নিয়ে গেল।
ওরা জিজ্ঞেস করল, “তুই ছাত্রদল না শিবির?” আমি বললাম, “আমি সাধারণ ছাত্র।” তাদের একজন আমার ফেসবুক পোস্টটি দেখিয়ে বলল, “তাহলে ছাত্রলীগ সম্পর্কে এমন কথা কেন লিখেছিস? ফোন বের কর।” আমি আপত্তি করলাম, “ফোন তো আমার ব্যক্তিগত জিনিস, কেন দিব?” আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই একজন আমার ফোন কেড়ে নিয়ে পোস্টটি ডিলিট করে দিল। এর পরপরই হঠাৎ করে একজন প্রচণ্ড জোরে আমার গালে থাপ্পড় দিল, আমি মাটিতে পড়ে গেলাম। এরপর আবারও আমাকে টেনে তুলে বলল, “কান ধরে মাফ চা, হাঁটু গেড়ে বসে, তা না হলে তোকেও মেরেই ফেলব।”
মনের ভেতরে তখন ঝড় বইছিল। আমি নিজেকে বললাম, “মরতে হলে মরব, কিন্তু মাফ চাইব না।” আমি তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিলাম, “তোমরা মারতে মারতে মেরেও ফেললেও মাফ চাইবো না।” এরপর তারা আমাকে অমানুষিকভাবে মারধর শুরু করল। চারপাশ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল। এক কোনায় পুলিশের ভ্যান দাঁড়িয়েছিল। পুলিশ চুপ চাপ তাকিয়ে দেখছিল। একসময় টের পেলাম, শরীরে আঘাত লাগছে, কিন্তু ব্যথা পাচ্ছি না—মুখটা যেন অবস হয়ে গেছে। একজন বলল, “মাফ চাইবি না? তোকে মারতে মারতে মেরেই ফেলব।”
ঠিক সেই মুহূর্তে একজন শিক্ষক এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। তিনি বললেন, “বাবারে, আর মারিস না, ছেলেটাকে অনেক মেরেছিস।” কয়েকটা আঘাত শিক্ষকের গায়েও লাগল। তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে কলেজ গেটের বাইরে নিয়ে এলেন এবং একটি রিকশা করে বাসায় পাঠিয়ে দিলেন।
ভালোবাসা দিবসে লাল গোলাপ নিয়ে নয়, আমি ফুলে যাওয়া মুখ নিয়ে বাসায় ফিরলাম। আমার পরিবার আতঙ্কে পড়ে গেল। আমার বাবা বললেন, “কলেজেই যদি এই অবস্থা হয়, ভার্সিটিতে গেলে তো ওকে মেরেই ফেলবে।” সেই ভীতি, কষ্ট, ঘৃণার কারণেই ২০১৯ সালে এইচএসসি পাস করে আমি বিদেশে পাড়ি জমালাম।
সম্প্রতি ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ার খবর শুনে আমি প্রচন্ড খুশি হয়েছি। ব্যক্তিগত বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, এ নিষেধাজ্ঞা ন্যায়সংগত।’
তানভির আখতার সাকিব নামে ইংল্যান্ডে একটি সফটওয়্যার ফার্মে কর্মরত বাংলাদেশের একজন ২০১৮ সালে পড়তেন রাজশাহী সিটি কলেজে। ওই সময় ছাত্রলীগের মিছিলে যেতে বাধ্য করায় ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন তিনি। ওই একটি স্ট্যাটাস তার জীবনে কী কালো অধ্যায় নামিয়ে এনেছিলো, সেটা নিজেই বর্নণা করেছেন সম্প্রতি ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর। তানভিরের পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। রাজশাহী সিটি কলেজে ছাত্রলীগের নিয়মিত কার্যকলাপের অংশ হিসেবে, তারা প্রায়ই জোর করে ছাত্রছাত্রীদের মিছিলে অংশ নিতে বাধ্য করত। একদিন মেইন গেট বন্ধ করে ঘোষণা দিল, সবাইকে মিছিলে থাকতে হবে। বাধ্যতামূলক মিছিলে অংশ নিতে না চেয়ে গেটে দাঁড়িয়ে থাকা এক কর্মীর কাছে গিয়ে বললাম, “আমাকে বাসায় যেতে হবে।” কিন্তু সে আমার কথা না শুনে, উল্টো ধাক্কা দিয়ে আমাকে ভিতরে পাঠিয়ে দিল। প্রচন্ড রাগ হলো। বাসায় ফিরে ফেসবুকে লিখলাম, “ছাত্রছাত্রীদের জোর করে মিছিলে বাধ্য করা, গেট আটকে দাঁড়িয়ে রাখা—এটাই সিটি কলেজ ছাত্রলীগ।”
পোস্টটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে গেল। তখন আমাদের পরীক্ষা চলছিল। ১৪ই ফেব্রুয়ারি ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষার দিন। পরীক্ষা শুরুর ১৫ মিনিটের মাথায় ১৫-২০ জন ছাত্রলীগের কর্মী পরীক্ষার হলে ঢুকল। একজন জোরে জিজ্ঞেস করল, “তানভীর আখতার শাকিব কে?” আমি উঠে দাঁড়ালাম। তারা শিক্ষককে আমার উত্তরপত্র নিয়ে নিতে বলল। একজন বলল, “ওর পরীক্ষা শেষ, খাতা নিয়ে নেন।” তারপর দুইজন এসে আমাকে দুই পাশ থেকে ধরে হল থেকে বের করে কলেজ প্রাঙ্গণে নিয়ে গেল।
ওরা জিজ্ঞেস করল, “তুই ছাত্রদল না শিবির?” আমি বললাম, “আমি সাধারণ ছাত্র।” তাদের একজন আমার ফেসবুক পোস্টটি দেখিয়ে বলল, “তাহলে ছাত্রলীগ সম্পর্কে এমন কথা কেন লিখেছিস? ফোন বের কর।” আমি আপত্তি করলাম, “ফোন তো আমার ব্যক্তিগত জিনিস, কেন দিব?” আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই একজন আমার ফোন কেড়ে নিয়ে পোস্টটি ডিলিট করে দিল। এর পরপরই হঠাৎ করে একজন প্রচণ্ড জোরে আমার গালে থাপ্পড় দিল, আমি মাটিতে পড়ে গেলাম। এরপর আবারও আমাকে টেনে তুলে বলল, “কান ধরে মাফ চা, হাঁটু গেড়ে বসে, তা না হলে তোকেও মেরেই ফেলব।”
মনের ভেতরে তখন ঝড় বইছিল। আমি নিজেকে বললাম, “মরতে হলে মরব, কিন্তু মাফ চাইব না।” আমি তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিলাম, “তোমরা মারতে মারতে মেরেও ফেললেও মাফ চাইবো না।” এরপর তারা আমাকে অমানুষিকভাবে মারধর শুরু করল। চারপাশ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল। এক কোনায় পুলিশের ভ্যান দাঁড়িয়েছিল। পুলিশ চুপ চাপ তাকিয়ে দেখছিল। একসময় টের পেলাম, শরীরে আঘাত লাগছে, কিন্তু ব্যথা পাচ্ছি না—মুখটা যেন অবস হয়ে গেছে। একজন বলল, “মাফ চাইবি না? তোকে মারতে মারতে মেরেই ফেলব।”
ঠিক সেই মুহূর্তে একজন শিক্ষক এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। তিনি বললেন, “বাবারে, আর মারিস না, ছেলেটাকে অনেক মেরেছিস।” কয়েকটা আঘাত শিক্ষকের গায়েও লাগল। তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে কলেজ গেটের বাইরে নিয়ে এলেন এবং একটি রিকশা করে বাসায় পাঠিয়ে দিলেন।
ভালোবাসা দিবসে লাল গোলাপ নিয়ে নয়, আমি ফুলে যাওয়া মুখ নিয়ে বাসায় ফিরলাম। আমার পরিবার আতঙ্কে পড়ে গেল। আমার বাবা বললেন, “কলেজেই যদি এই অবস্থা হয়, ভার্সিটিতে গেলে তো ওকে মেরেই ফেলবে।” সেই ভীতি, কষ্ট, ঘৃণার কারণেই ২০১৯ সালে এইচএসসি পাস করে আমি বিদেশে পাড়ি জমালাম।
সম্প্রতি ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ার খবর শুনে আমি প্রচন্ড খুশি হয়েছি। ব্যক্তিগত বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, এ নিষেধাজ্ঞা ন্যায়সংগত।’