একটি মাত্র ছবি। কিন্তু এই একটি ছবি নিয়েই তোলপাড়। আওয়ামী সাংবাদিকদের সঙ্গে বসে ডালপুরি খাচ্ছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। এই ছবিকে পুঁজি করে বাংলাদেশের রাজনীতির ময়দান ঘোলাটে করারও চেষ্টা দৃশ্যমান। নানা প্রশ্ন, আলোচনা-সমালোচনা, হতাশার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। বিশেষ করে বিএনপির একটি অংশ একে পুঁজি করে জামায়াতকে হেয় করার অপচেষ্টাও চালাচ্ছে।
মোটকথা টক অব দ্য শোস্যাল মিডিয়া হয়ে পড়ে- জামায়াত আমিরের সঙ্গে আওয়ামী ফ্যাসিবাদপন্থী সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, আবুল কালাম আজাদ এবং ওমর ফারুকদের বসে থাকা এই ছবিটি।
সময়েরকথা.কম এই ছবির বিষয়ে ব্যাপক খোঁজ-খবর নিয়েছে। বের করেছে এর নেপথ্যের কাহিনি। সে বেশ কিছু প্রশ্নও তুলে এনেছে। প্রথমে ছবিটির সন্ধিবিচ্ছেদ করা যাক….
বাংলাদেশ ফেডারেশ সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি, বার বার কারানির্যাতিত সাংবাদিকদের অবিসংবাধিত নেতা রুহুল আমিন গাজীর জানাজা পড়ার জন্য বুধবার দুপুরে প্রেসক্লাবে আসেন জামায়াত আমির। তার সঙ্গে ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ আরও বেশি কিছু কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরী নেতৃবৃন্দ।
জানাজ শুরুর আগে বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাংবাদিকরা জামায়াত নেতাদের নিয়ে যান প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে। সেখানে একটি গোলটেবিল ঘিরে জামায়াত নেতারা বসে নানাজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এরই ফাঁকে জানাজা উপলক্ষে প্রেসক্লাবে ঢুকে পড়া আওয়ামী ফ্যাসিবাদপন্থী উপরোক্ত চার সাংবাদিক গিয়ে আমিরে জামায়াতের আশপাশে বসে পড়েন।
ওই সময়ই তোলা কয়েকটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। যা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় যে, আওয়ামীপন্থী বিতর্কিত সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, ওমর ফারুকদের সঙ্গে কেন জামায়াতের আমির?
মিডিয়ার কাছে বিষয়টি পরিস্কার করেছেন জামায়াতের আমির নিজেই। একটি মিডিয়াকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীর জানাজায় ইমামতি করতে প্রেসক্লাবে যান তিনি। টেবিলে বসে থাকার সময়, বুলবুল, ইকবাল সোবহানসহ কয়েকজন সাংবাদিক তার পাশে এসে বসেন। তাদের সঙ্গে কোন বৈঠক বা আলোচনা হয়নি জানিয়ে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, তারা পাশে এসে বসায় তিনি বিব্রত হয়েছেন।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা খন্দকার আলমগীর হোসাইন ছবির আসল রহস্য জানিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এই ছবির প্রকৃত কাহিনি…, জামায়াত নেতারা জাতীয় প্রেসক্লাবের টিভি রুমে আগে থেকে ওই টেবিলে বসেছিলেন গাজী ভাইয়ের জানাজার অপেক্ষায়। আমরা সবাই জানাজার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত। বিএনপি-জামায়াতপন্থী আমাদের ভাইয়েরা জামায়াত নেতাদের সাথে সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলাপ করছিলেন। কেউ আসছেন কেউ যাচ্ছেন। এরপর একে একে আওয়ামীপন্থী সাংবাদিক নেতারা ওখানে এসে জামায়াত নেতাদের সাথে বসেন। তখন জামায়াত নেতাদের কী করণীয় ছিল। তাদের উঠিয়ে দেওয়া? তারাও জানাজায় অংশ নিতে এসেছিলেন। আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম।’
সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান লিখেছেন, ‘আওয়ামী সাংবাদিকরা রাজাকার বলে মুখে ফেনা তুলতেন। তাদের সাথে যারা মেশেন তাদেরকেও অচ্যুত বলে ঘৃণা করতেন। অথচ, তাদের ভাষায় রাজাকার অচ্যুতদের সাথে একটু বসে সহব্বত নিতে প্রতিযোগিতা হয়েছে আজ। ‘সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজীভাইয়ের জানাজায় অংশ নিতে প্রেসক্লাবে এসেছিলেন জামায়াত নেতৃবৃন্দ। প্রেসক্লাবের মেম্বার লাউঞ্জে প্রবেশের পরপরই শুরু হয় আওয়ামী সাংবাদিকদের প্রতিযোগিতা। কে কার আগে এসে করমর্দন করবেন, কে পাশে বসবেন। এ নিয়ে বেশ প্রতিযোগিতা হয়েছে আওয়ামী সাংবাদিকদের মধ্যে। ‘জামায়াত আমিরের পাশে আছেন ইকবাল সোবহান চৌধুরী, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, আবুল কালাম আজাদ, ওমর ফারুক। উপস্থিত সাংবাদিকদের নিকট থেকে জানা গেছে, এসময় আশেপাশে ঘুরঘুর করছিলেন আরও অনেকেই।’
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, ‘বিপ্লবের পর তারা প্রেসক্লাবে আসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। গাজী ভাইয়ের জানাজাকে কেন্দ্র করে প্রেসক্লাবে ফিরেছেন আওয়ামীরা। তাদের নির্লজ্জ চেষ্টা জামায়াত নেতাদের সহব্বত নিয়ে যদি আবার ফেরা যায়। আওয়ামীরা ফ্যাসিবাদি। তারা ভিন্নমত সহ্য করে না। ঠেলায় পড়লে পায়ে পড়তেও দেরি করে না।’
প্রয়াত সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীর নামাজে জানাজা জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। জানাজায় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বহু রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
৫ আগস্টের পর অনেকটা আত্মগোপনে থাকা আওয়ামীপন্থী সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল এভাবে প্রকাশ্যে আসায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকেই। কারণ ছাত্র আন্দোলনে যাত্রাবাড়ীতে ইমরান হোসেন নামের এক তরুণ হত্যা মামলার আসামী শেখ হাসিনার সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল।
নেতা-কর্মীদের মাঝে কিছু হতাশা
জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর শুরা সদস্য মেসবাহ উদ্দিন সাঈদ এই ছবি দেখে দারুণ হতাশ হয়েছে। তিনি হতাশার কথা জানিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘প্রিয় আমীরে জামায়াত, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
আজ আমি বিনয়ের সাথে একটা দুঃসাহস দেখাতে চাই।আমি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এক দুর্বল কর্মী। কোনো ত্রুটি হলে মার্জনা করবেন আশাকরি।
কিছুদিন আগে আপনি বলেছিলেন, আমার ভুল হলে শুধরিয়ে দিতে। তবে ভুল শুধরানোর মতো এত বড় সাহস ও ঔদ্ধত্য আমি দেখাতে চাই না। তারপরও একটা কথা না বলে পারছি না।
আপনাকে বিভিন্ন জাতীয় প্রোগ্রামে যারা নিয়ে যায়, তাদের বিবেকবোধ জাগ্রত হওয়া উচিত। যারা শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট বানিয়েছে, রক্তচোষা দানব বানিয়েছে, মিডিয়া ট্রায়েলে সম্মুখভাগ থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদেরকে ডানে-বামে রেখে আপনাকে বসতে দেওয়াটা আপনার অপরাধ বলব না, ভুলও বলব না।
তবে যারা আপনাকে নিয়ে যায়, আপনার সাথে থাকে, ওই সমস্ত চরম অথর্ব এবং হিতাহিতজ্ঞানশূন্য ব্যক্তিদের আপনার আশেপাশে থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিনীত অনুরোধ রইল।
কিছু অদূরদর্শী ব্যক্তির জন্য আমাদের এত বড় অর্জন ধুলায় মিশে যাবে, এটা আমরা কোনোমতেই মেনে নিতে পারব না। আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় মাননীয় আমীর।
মাননীয় আমীরে জামায়াত, আপনাকে বিতর্কিত করতে আজকের এই দৃশ্য আপনার আশেপাশের কারও ষড়যন্ত্র কিনা, তাও খতিয়ে দেখা জরুরি।’
(মেসাবহ উদ্দিন সাঈদ পরে স্ট্যাটাসটি মুছে দেন)
রাশেদ আলম নামে জামায়াতের এক রুকন আক্ষেপ নিয়ে কিছু কথা লিখেছেন। তিনি লিখেন, ‘বিচক্ষণতা, দূরদর্শীতা এবং প্রজ্ঞা, এই তিন যোগ্যতা না থাকলে রাজনীতিতে টিকে থাকা সম্ভব নয়। জামায়াত মানুষ দ্বারা পরিচালিত সংগঠন, সে হিসেবে ভুল হতেই পারে, ভুল করাটা দোষের নয়, যদি অনুতপ্ত হয়। কিন্তু ইগোর কারণে হোক বা নির্বুদ্ধিতার কারনে হোক ভুলের উপর দৃঢ় থাকাটা মারাত্মক দোষের!
জামায়াতের নিবেদিতপ্রাণ জনশক্তিরা হাজারো শহীদের রক্তের উপর দাড়িয়ে থাকা মজলুম এই সংগঠনকে বিতর্কিত হতে দিতে পারে না।
মিডিয়া জগতের চিহ্নিত তিন শীর্ষ তথ্য সন্ত্রাসী ও খুনিদের পাশে বসা (অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও) দোষের, এটাকে ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে জায়েজ করারও সুযোগ নাই!
ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে জায়েজ করাটা অন্যান্য আদর্শহীণ দলের চরিত্রের মতই হবে।
বিশেষ করে বিগত পতিত ও পালায়নকারী স্বৈরাচারের তিন প্রভাবশালী সাংবাদিক নেতা যারা গত ষোল বছরে মিডিয়াকে ব্যবহার করে জামায়াত-শিবিরকে জনগনের কাছে সন্ত্রাসী, জঙ্গী, দেশদ্রোহী হিসেবে ঘৃণ্য ভাবে অপপ্রচার চালিয়েছে! জামায়াত-শিবিরকে গণহারে হত্যা করাকে নরমালাইজ করেছে, যারা শহীদ অধ্যাপক গোলাম আযম (রহঃ) শহীদ মাওলানা নিজামী (রহঃ), শহীদ, আলী আহসান মুজাহিদ, শহীদ আল্লামা সাঈদী (রহঃ), শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা (রহঃ), শহীদ কামারুজ্জামান (রহঃ), শহীদ মীর কাশেম আলী (রহঃ) সহ শীর্ষ ১১ জন ডায়নামিক নেতৃবৃন্দকে হত্যার ষড়যন্ত্রের সাথে সরাসরি যুক্ত, যারা জামায়াত শিবিরের সর্বোস্তরের জনশক্তিদের কোন নাগরিকই মনে করেনি, জামায়াত শিবিরের উপর হওয়া যে কোন অন্যায়কে বৈধতা দিয়েছে, যারা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে তাদের সাথে কোন ভাবেই কোন অযুহাতে জামায়াতের বর্তমান নেতৃবৃন্দের এক সাথে বসা তো দূরের কথা, রাস্তায় একসাথে একদিক দিয়ে হাটাকেও মেনে নেওয়া সম্ভব নয়!
স্পষ্ট কথা যারা শহীদের রক্তকে ভুলে, হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপর দিনরাত ধারাবাহিক চলা নির্মম নির্যাতনকে ভুলে খুনি ও তার দোষরদের সাথে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে বসার সুযোগ করে দিয়েছেন তারাদেরকে শহীদ পরিবার ও জাতির সামনে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। জামায়াতে জবাবদিহিতার সুযোগ আছে, আমীরে জামায়াতও জবাবদিহিতার উর্ধ্বে নয়। রাজনীতির ময়দানে জামায়াত যে আদর্শকে স্টাবলিশ করতে চায়, দুনিয়ার সমস্ত শক্তি সেই আদর্শের প্রতিপক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বি। সুতরাং জামায়াতকে খুব সাবধাণে পা ফেলতে হবে। এখন ভুলকে ভুল মেনে নিয়ে স্পষ্ট দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দেওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
– বৃহত্তর এ জামায়াতের একজন ক্ষুদ্র নিবেদিতপ্রাণ শপথের কর্মী।’
কিছু প্রশ্ন
আওয়ামীপন্থী সাংবাদিকদের সঙ্গে জামায়াত আমিরের এই ছবি রাজনৈতিক অঙ্গন সরগরম হবে- এটা খুবই স্বাভাবিক। নানাজন, নানাভাবে জামায়াতকে বেকায়দায় পেলে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করবে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সাংবাদিকরাও চাইবে এটা দিয়ে লাভবান হতে। কিন্তু সত্যিই কী তারা লাভবান হতে পারবে? কারণ, তাদের সামনে দিবালোকের মত সত্য কিছু প্রশ্ন এসে দাঁড়িয়েছে।
কয়েকজন সাংবাদিকই মূলত ফেসবুকে এ প্রশ্নগুলো তুলে ধরেছে আওয়ামী সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে। সেখান থেকেই প্রশ্নগুলো কপি/পেস্ট করা হলো।
১. চেতনাধারী সাংবাদিক নেতারা (ইকবাল, বুলবুল, আজাদ, ওমর ফারুক), আজ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে নেই, আর আপনারা খুব পুরি খেয়ে বেড়াচ্ছেন? আপনারা একসময় যাদের রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধী বলতেন। যাদের দেখলে অচ্যুত মনে হতো আপনাদের। যাদের ছায়া পর্যন্ত মাড়াতে চাইতেন না। যাদেরকে নির্মুল করার জন্য হেন কোনো ষড়যন্ত্র নেই যা আপনারা করতেন না, তাদের সাথে বসেই পুরি খাচ্ছেন?
২. আপনাদের ভাষ্যমতে- যারা রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি, দুই মাস আগে যাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, যা ছিল আপনাদের ক্ষমতায় থাকার জন্য সবচেয়ে বেশি কার্যকর অস্ত্র। আর এখন আপনারা তাদের সাথে কিভাবে বসলেন?
৩. এত ঠুনকো আপনাদের চেতনা? ভিন্নমতের মানুষদের কী নাজেহাল না আপনারা করেছিলেন এই ১৬ বছরে চেতনার দোহাই দিয়ে? একটু প্রতিবাদ, ভিন্নচিন্তা করলেই আপনারা বলতেন জামাত, শিবির, রাজাকার। আপনারা প্রায়ই একটা কথা বলতেন মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি। আপনাদের চিন্তার বাইরে গেলে, আপনাদের ভাবনার বিরুদ্ধে গেলেই ট্যাগ লাগাতেন মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি বলে। আর গতকাল (বুধবার) কী করলেন, আপনাদের বয়ানের সেই মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ শক্তির শীর্ষ নেতাদের টেবিলে গিয়ে ম্যাও ম্যাও করে বসে পুরি খাওয়া শুরু করে দিলেন, একটু লজ্জাও কী করেনি আপনাদের?
৪. এই আপনারা আবার ২০১৫ সালে বিএনপির মহাসচিবকে রাজাকার বলে গালি দিলেন, পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিলেন জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে। সেদিন আপনারা একটুও সভ্যতা ভব্যতা দেখালেন না। ক্ষমতায় থাকাকালে আপনাদের তেলবাজি কেমন হতো, সেটা দেখে মানুষ লজ্জা পাওয়াও ভুলে গেছিল।
৫. এখন অনেকে জামায়াত নেতাদের সাথে আওয়ামী লীগ দলীয় সাংবাদিক নেতাদের জাতীয় প্রেসক্লাবে এক টেবিলে বসাকে কোনো রাজনীতি হিসেবে দেখতে চান না। এটা ভুল। চরম ভুল। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগই একমাত্র দল যারা সারাদিন জামায়াত জামায়াত বলে গালি দেয়, আবার জামায়াতের সাথে বসতেও তাদের সময় লাগে না। একই কথা জামায়াতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তারা এত হীনমন্যতায় ভুগে, তাই যখনই কোন আওয়ামী লীগ নেতা তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে আসে তার গদোগদো হয়ে নেতাদের পিঠ চুলকিয়ে দেয়।’
৬. আরেকটি বড় প্রশ্ন হলো, যে সাংবাদিকরা যুদ্ধাপরাধ ও চেতনার বয়ান তৈরি করে গত ১৫ বছর জামায়াতের নেতা-কর্মীদের অবাধে মেরে ফেলার লাইসেন্স দিয়েছেন, যারা স্বৈরাচার হাসিনারা কোনো অন্যায়-অপকর্মকে প্রশ্ন করেননি, বরং সঠিক বলে রায় দিয়ে দিয়ে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছেন, সারা দেশে অসংখ্য হত্যা, খুন-গুম, নির্যাতনের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অবাদে গুলি চালিয়ে ছাত্র-জনতা হত্যাকে সমর্থন জানিয়েছেন, আর যাই হোক- তাদের সঙ্গে এক টেবিলে বসার মত বোকামি কখনোই জামায়াত আমিরের মত মানুষ করতে পারেন না। করেননি। ওখানে যে ওই ফ্যাসিবাদী সাংবাদিকরা এসে বসেছিলেন, সেটা যে মারাত্মক মতলবী, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
একটি মাত্র ছবি। কিন্তু এই একটি ছবি নিয়েই তোলপাড়। আওয়ামী সাংবাদিকদের সঙ্গে বসে ডালপুরি খাচ্ছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। এই ছবিকে পুঁজি করে বাংলাদেশের রাজনীতির ময়দান ঘোলাটে করারও চেষ্টা দৃশ্যমান। নানা প্রশ্ন, আলোচনা-সমালোচনা, হতাশার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। বিশেষ করে বিএনপির একটি অংশ একে পুঁজি করে জামায়াতকে হেয় করার অপচেষ্টাও চালাচ্ছে।
মোটকথা টক অব দ্য শোস্যাল মিডিয়া হয়ে পড়ে- জামায়াত আমিরের সঙ্গে আওয়ামী ফ্যাসিবাদপন্থী সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, আবুল কালাম আজাদ এবং ওমর ফারুকদের বসে থাকা এই ছবিটি।
সময়েরকথা.কম এই ছবির বিষয়ে ব্যাপক খোঁজ-খবর নিয়েছে। বের করেছে এর নেপথ্যের কাহিনি। সে বেশ কিছু প্রশ্নও তুলে এনেছে। প্রথমে ছবিটির সন্ধিবিচ্ছেদ করা যাক….
বাংলাদেশ ফেডারেশ সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি, বার বার কারানির্যাতিত সাংবাদিকদের অবিসংবাধিত নেতা রুহুল আমিন গাজীর জানাজা পড়ার জন্য বুধবার দুপুরে প্রেসক্লাবে আসেন জামায়াত আমির। তার সঙ্গে ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ আরও বেশি কিছু কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরী নেতৃবৃন্দ।
জানাজ শুরুর আগে বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাংবাদিকরা জামায়াত নেতাদের নিয়ে যান প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে। সেখানে একটি গোলটেবিল ঘিরে জামায়াত নেতারা বসে নানাজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এরই ফাঁকে জানাজা উপলক্ষে প্রেসক্লাবে ঢুকে পড়া আওয়ামী ফ্যাসিবাদপন্থী উপরোক্ত চার সাংবাদিক গিয়ে আমিরে জামায়াতের আশপাশে বসে পড়েন।
ওই সময়ই তোলা কয়েকটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। যা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় যে, আওয়ামীপন্থী বিতর্কিত সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, ওমর ফারুকদের সঙ্গে কেন জামায়াতের আমির?
মিডিয়ার কাছে বিষয়টি পরিস্কার করেছেন জামায়াতের আমির নিজেই। একটি মিডিয়াকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীর জানাজায় ইমামতি করতে প্রেসক্লাবে যান তিনি। টেবিলে বসে থাকার সময়, বুলবুল, ইকবাল সোবহানসহ কয়েকজন সাংবাদিক তার পাশে এসে বসেন। তাদের সঙ্গে কোন বৈঠক বা আলোচনা হয়নি জানিয়ে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, তারা পাশে এসে বসায় তিনি বিব্রত হয়েছেন।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা খন্দকার আলমগীর হোসাইন ছবির আসল রহস্য জানিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এই ছবির প্রকৃত কাহিনি…, জামায়াত নেতারা জাতীয় প্রেসক্লাবের টিভি রুমে আগে থেকে ওই টেবিলে বসেছিলেন গাজী ভাইয়ের জানাজার অপেক্ষায়। আমরা সবাই জানাজার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত। বিএনপি-জামায়াতপন্থী আমাদের ভাইয়েরা জামায়াত নেতাদের সাথে সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলাপ করছিলেন। কেউ আসছেন কেউ যাচ্ছেন। এরপর একে একে আওয়ামীপন্থী সাংবাদিক নেতারা ওখানে এসে জামায়াত নেতাদের সাথে বসেন। তখন জামায়াত নেতাদের কী করণীয় ছিল। তাদের উঠিয়ে দেওয়া? তারাও জানাজায় অংশ নিতে এসেছিলেন। আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম।’
সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান লিখেছেন, ‘আওয়ামী সাংবাদিকরা রাজাকার বলে মুখে ফেনা তুলতেন। তাদের সাথে যারা মেশেন তাদেরকেও অচ্যুত বলে ঘৃণা করতেন। অথচ, তাদের ভাষায় রাজাকার অচ্যুতদের সাথে একটু বসে সহব্বত নিতে প্রতিযোগিতা হয়েছে আজ। ‘সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজীভাইয়ের জানাজায় অংশ নিতে প্রেসক্লাবে এসেছিলেন জামায়াত নেতৃবৃন্দ। প্রেসক্লাবের মেম্বার লাউঞ্জে প্রবেশের পরপরই শুরু হয় আওয়ামী সাংবাদিকদের প্রতিযোগিতা। কে কার আগে এসে করমর্দন করবেন, কে পাশে বসবেন। এ নিয়ে বেশ প্রতিযোগিতা হয়েছে আওয়ামী সাংবাদিকদের মধ্যে। ‘জামায়াত আমিরের পাশে আছেন ইকবাল সোবহান চৌধুরী, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, আবুল কালাম আজাদ, ওমর ফারুক। উপস্থিত সাংবাদিকদের নিকট থেকে জানা গেছে, এসময় আশেপাশে ঘুরঘুর করছিলেন আরও অনেকেই।’
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, ‘বিপ্লবের পর তারা প্রেসক্লাবে আসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। গাজী ভাইয়ের জানাজাকে কেন্দ্র করে প্রেসক্লাবে ফিরেছেন আওয়ামীরা। তাদের নির্লজ্জ চেষ্টা জামায়াত নেতাদের সহব্বত নিয়ে যদি আবার ফেরা যায়। আওয়ামীরা ফ্যাসিবাদি। তারা ভিন্নমত সহ্য করে না। ঠেলায় পড়লে পায়ে পড়তেও দেরি করে না।’
প্রয়াত সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীর নামাজে জানাজা জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। জানাজায় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বহু রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
৫ আগস্টের পর অনেকটা আত্মগোপনে থাকা আওয়ামীপন্থী সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল এভাবে প্রকাশ্যে আসায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকেই। কারণ ছাত্র আন্দোলনে যাত্রাবাড়ীতে ইমরান হোসেন নামের এক তরুণ হত্যা মামলার আসামী শেখ হাসিনার সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল।
নেতা-কর্মীদের মাঝে কিছু হতাশা
জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর শুরা সদস্য মেসবাহ উদ্দিন সাঈদ এই ছবি দেখে দারুণ হতাশ হয়েছে। তিনি হতাশার কথা জানিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘প্রিয় আমীরে জামায়াত, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
আজ আমি বিনয়ের সাথে একটা দুঃসাহস দেখাতে চাই।আমি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এক দুর্বল কর্মী। কোনো ত্রুটি হলে মার্জনা করবেন আশাকরি।
কিছুদিন আগে আপনি বলেছিলেন, আমার ভুল হলে শুধরিয়ে দিতে। তবে ভুল শুধরানোর মতো এত বড় সাহস ও ঔদ্ধত্য আমি দেখাতে চাই না। তারপরও একটা কথা না বলে পারছি না।
আপনাকে বিভিন্ন জাতীয় প্রোগ্রামে যারা নিয়ে যায়, তাদের বিবেকবোধ জাগ্রত হওয়া উচিত। যারা শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট বানিয়েছে, রক্তচোষা দানব বানিয়েছে, মিডিয়া ট্রায়েলে সম্মুখভাগ থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদেরকে ডানে-বামে রেখে আপনাকে বসতে দেওয়াটা আপনার অপরাধ বলব না, ভুলও বলব না।
তবে যারা আপনাকে নিয়ে যায়, আপনার সাথে থাকে, ওই সমস্ত চরম অথর্ব এবং হিতাহিতজ্ঞানশূন্য ব্যক্তিদের আপনার আশেপাশে থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিনীত অনুরোধ রইল।
কিছু অদূরদর্শী ব্যক্তির জন্য আমাদের এত বড় অর্জন ধুলায় মিশে যাবে, এটা আমরা কোনোমতেই মেনে নিতে পারব না। আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় মাননীয় আমীর।
মাননীয় আমীরে জামায়াত, আপনাকে বিতর্কিত করতে আজকের এই দৃশ্য আপনার আশেপাশের কারও ষড়যন্ত্র কিনা, তাও খতিয়ে দেখা জরুরি।’
(মেসাবহ উদ্দিন সাঈদ পরে স্ট্যাটাসটি মুছে দেন)
রাশেদ আলম নামে জামায়াতের এক রুকন আক্ষেপ নিয়ে কিছু কথা লিখেছেন। তিনি লিখেন, ‘বিচক্ষণতা, দূরদর্শীতা এবং প্রজ্ঞা, এই তিন যোগ্যতা না থাকলে রাজনীতিতে টিকে থাকা সম্ভব নয়। জামায়াত মানুষ দ্বারা পরিচালিত সংগঠন, সে হিসেবে ভুল হতেই পারে, ভুল করাটা দোষের নয়, যদি অনুতপ্ত হয়। কিন্তু ইগোর কারণে হোক বা নির্বুদ্ধিতার কারনে হোক ভুলের উপর দৃঢ় থাকাটা মারাত্মক দোষের!
জামায়াতের নিবেদিতপ্রাণ জনশক্তিরা হাজারো শহীদের রক্তের উপর দাড়িয়ে থাকা মজলুম এই সংগঠনকে বিতর্কিত হতে দিতে পারে না।
মিডিয়া জগতের চিহ্নিত তিন শীর্ষ তথ্য সন্ত্রাসী ও খুনিদের পাশে বসা (অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও) দোষের, এটাকে ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে জায়েজ করারও সুযোগ নাই!
ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে জায়েজ করাটা অন্যান্য আদর্শহীণ দলের চরিত্রের মতই হবে।
বিশেষ করে বিগত পতিত ও পালায়নকারী স্বৈরাচারের তিন প্রভাবশালী সাংবাদিক নেতা যারা গত ষোল বছরে মিডিয়াকে ব্যবহার করে জামায়াত-শিবিরকে জনগনের কাছে সন্ত্রাসী, জঙ্গী, দেশদ্রোহী হিসেবে ঘৃণ্য ভাবে অপপ্রচার চালিয়েছে! জামায়াত-শিবিরকে গণহারে হত্যা করাকে নরমালাইজ করেছে, যারা শহীদ অধ্যাপক গোলাম আযম (রহঃ) শহীদ মাওলানা নিজামী (রহঃ), শহীদ, আলী আহসান মুজাহিদ, শহীদ আল্লামা সাঈদী (রহঃ), শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা (রহঃ), শহীদ কামারুজ্জামান (রহঃ), শহীদ মীর কাশেম আলী (রহঃ) সহ শীর্ষ ১১ জন ডায়নামিক নেতৃবৃন্দকে হত্যার ষড়যন্ত্রের সাথে সরাসরি যুক্ত, যারা জামায়াত শিবিরের সর্বোস্তরের জনশক্তিদের কোন নাগরিকই মনে করেনি, জামায়াত শিবিরের উপর হওয়া যে কোন অন্যায়কে বৈধতা দিয়েছে, যারা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে তাদের সাথে কোন ভাবেই কোন অযুহাতে জামায়াতের বর্তমান নেতৃবৃন্দের এক সাথে বসা তো দূরের কথা, রাস্তায় একসাথে একদিক দিয়ে হাটাকেও মেনে নেওয়া সম্ভব নয়!
স্পষ্ট কথা যারা শহীদের রক্তকে ভুলে, হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপর দিনরাত ধারাবাহিক চলা নির্মম নির্যাতনকে ভুলে খুনি ও তার দোষরদের সাথে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে বসার সুযোগ করে দিয়েছেন তারাদেরকে শহীদ পরিবার ও জাতির সামনে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। জামায়াতে জবাবদিহিতার সুযোগ আছে, আমীরে জামায়াতও জবাবদিহিতার উর্ধ্বে নয়। রাজনীতির ময়দানে জামায়াত যে আদর্শকে স্টাবলিশ করতে চায়, দুনিয়ার সমস্ত শক্তি সেই আদর্শের প্রতিপক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বি। সুতরাং জামায়াতকে খুব সাবধাণে পা ফেলতে হবে। এখন ভুলকে ভুল মেনে নিয়ে স্পষ্ট দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দেওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
– বৃহত্তর এ জামায়াতের একজন ক্ষুদ্র নিবেদিতপ্রাণ শপথের কর্মী।’
কিছু প্রশ্ন
আওয়ামীপন্থী সাংবাদিকদের সঙ্গে জামায়াত আমিরের এই ছবি রাজনৈতিক অঙ্গন সরগরম হবে- এটা খুবই স্বাভাবিক। নানাজন, নানাভাবে জামায়াতকে বেকায়দায় পেলে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করবে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সাংবাদিকরাও চাইবে এটা দিয়ে লাভবান হতে। কিন্তু সত্যিই কী তারা লাভবান হতে পারবে? কারণ, তাদের সামনে দিবালোকের মত সত্য কিছু প্রশ্ন এসে দাঁড়িয়েছে।
কয়েকজন সাংবাদিকই মূলত ফেসবুকে এ প্রশ্নগুলো তুলে ধরেছে আওয়ামী সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে। সেখান থেকেই প্রশ্নগুলো কপি/পেস্ট করা হলো।
১. চেতনাধারী সাংবাদিক নেতারা (ইকবাল, বুলবুল, আজাদ, ওমর ফারুক), আজ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে নেই, আর আপনারা খুব পুরি খেয়ে বেড়াচ্ছেন? আপনারা একসময় যাদের রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধী বলতেন। যাদের দেখলে অচ্যুত মনে হতো আপনাদের। যাদের ছায়া পর্যন্ত মাড়াতে চাইতেন না। যাদেরকে নির্মুল করার জন্য হেন কোনো ষড়যন্ত্র নেই যা আপনারা করতেন না, তাদের সাথে বসেই পুরি খাচ্ছেন?
২. আপনাদের ভাষ্যমতে- যারা রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি, দুই মাস আগে যাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, যা ছিল আপনাদের ক্ষমতায় থাকার জন্য সবচেয়ে বেশি কার্যকর অস্ত্র। আর এখন আপনারা তাদের সাথে কিভাবে বসলেন?
৩. এত ঠুনকো আপনাদের চেতনা? ভিন্নমতের মানুষদের কী নাজেহাল না আপনারা করেছিলেন এই ১৬ বছরে চেতনার দোহাই দিয়ে? একটু প্রতিবাদ, ভিন্নচিন্তা করলেই আপনারা বলতেন জামাত, শিবির, রাজাকার। আপনারা প্রায়ই একটা কথা বলতেন মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি। আপনাদের চিন্তার বাইরে গেলে, আপনাদের ভাবনার বিরুদ্ধে গেলেই ট্যাগ লাগাতেন মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি বলে। আর গতকাল (বুধবার) কী করলেন, আপনাদের বয়ানের সেই মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ শক্তির শীর্ষ নেতাদের টেবিলে গিয়ে ম্যাও ম্যাও করে বসে পুরি খাওয়া শুরু করে দিলেন, একটু লজ্জাও কী করেনি আপনাদের?
৪. এই আপনারা আবার ২০১৫ সালে বিএনপির মহাসচিবকে রাজাকার বলে গালি দিলেন, পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিলেন জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে। সেদিন আপনারা একটুও সভ্যতা ভব্যতা দেখালেন না। ক্ষমতায় থাকাকালে আপনাদের তেলবাজি কেমন হতো, সেটা দেখে মানুষ লজ্জা পাওয়াও ভুলে গেছিল।
৫. এখন অনেকে জামায়াত নেতাদের সাথে আওয়ামী লীগ দলীয় সাংবাদিক নেতাদের জাতীয় প্রেসক্লাবে এক টেবিলে বসাকে কোনো রাজনীতি হিসেবে দেখতে চান না। এটা ভুল। চরম ভুল। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগই একমাত্র দল যারা সারাদিন জামায়াত জামায়াত বলে গালি দেয়, আবার জামায়াতের সাথে বসতেও তাদের সময় লাগে না। একই কথা জামায়াতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তারা এত হীনমন্যতায় ভুগে, তাই যখনই কোন আওয়ামী লীগ নেতা তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে আসে তার গদোগদো হয়ে নেতাদের পিঠ চুলকিয়ে দেয়।’
৬. আরেকটি বড় প্রশ্ন হলো, যে সাংবাদিকরা যুদ্ধাপরাধ ও চেতনার বয়ান তৈরি করে গত ১৫ বছর জামায়াতের নেতা-কর্মীদের অবাধে মেরে ফেলার লাইসেন্স দিয়েছেন, যারা স্বৈরাচার হাসিনারা কোনো অন্যায়-অপকর্মকে প্রশ্ন করেননি, বরং সঠিক বলে রায় দিয়ে দিয়ে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছেন, সারা দেশে অসংখ্য হত্যা, খুন-গুম, নির্যাতনের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অবাদে গুলি চালিয়ে ছাত্র-জনতা হত্যাকে সমর্থন জানিয়েছেন, আর যাই হোক- তাদের সঙ্গে এক টেবিলে বসার মত বোকামি কখনোই জামায়াত আমিরের মত মানুষ করতে পারেন না। করেননি। ওখানে যে ওই ফ্যাসিবাদী সাংবাদিকরা এসে বসেছিলেন, সেটা যে মারাত্মক মতলবী, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।