ঢাকা: রবিবার, ৩ আগস্ট ২০২৫

Follow :

31°C
ঢাকা রবিবার, ৩ আগস্ট ২০২৫

‘মুসলিমদের শত্রু অভিন্ন’- দীর্ঘদিন পর দেয়া জুমার খুতবায় খামেনি

সময়ের কথা আন্তর্জাতিক ডেস্ক ৪ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার, ২২:৫৮ ৩ মিনিটে পড়ুন

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, মুসলিমদের শত্রু অভিন্ন এবং ইসরায়েলে চালানো ইরানের হামলা ছিল ‘ন্যূনতম শাস্তি’। প্রায় পাঁচ বছর পর জুমার নামাজের ইমামতি এবং খুতবায় দাঁড়িয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

শুক্রবার তেহরানের গ্র্যান্ড মোসাল্লা মসজিদে জুমার নামাজে অংশ নেন তিনি। এটি ২০২০ সালের পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতার প্রথম কোনো জনসমাগমে দেওয়া ভাষণ।

এতে তিনি বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের ঐক্যের ওপর জোর দেন। ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ কোরআনের নীতির ওপর ভিত্তি করে এই ঐক্য গড়ার কথা বলেন তিনি। আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি বলেন, একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র, লেবানন এবং অন্যান্য মুসলিম দেশ আর ইরানের শত্রু একই।

পদাধিকারবলে খামেনিই তেহরানের জুমার নামাজের খতিব। তবে, সাধারণত অধস্তনদের দিয়েই পালাক্রমে খুতবার দায়িত্ব পালন করান তিনি। বিশেষ দু’একটি ঘটনার সময়ই শুধু তাকে খতিবের দায়িত্বে আসীন হতে দেখা গেছে।

যেমন ২০২০ সালে জেনারেল কাসেম সোলেইমানির মৃত্যুর পর তিনি খুতবা দিতে এসেছিলেন। বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন সোলেইমানি।

তেহরানের মোসাল্লা মসজিদ

তখন সোলেইমানির মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় ইরাকে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালিয়েছিল ইরান। এরও আগে তিনি খুতবায় দাঁড়িয়েছিলেন ২০১২ সালে।

সে হিসেবে এবারেরটি গত এক যুগে তার তৃতীয় খুতবা। খামেনি তার বক্তব্যে, মঙ্গলবার ইসরায়েলে চালানো হামলার প্রশংসা করেন। ওই হামলাকে পুরোপুরি ‘বৈধ’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ইসরায়েলের ‘বিস্ময়কর সব অপরাধের’ বিরুদ্ধে ইরান যা করেছে সেটিকে ‘ন্যূনতম শাস্তি’ হিসেবেই দেখছেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা।

তিনি শুধু ধর্মীয় নেতাই নন, ক্ষমতা কাঠামোতেও তার অবস্থান সর্বোচ্চ। যে কারণে, খামেনির বক্তব্যই ইরানের নীতি সম্পর্কে ধারণা দেয়। ভাষণে দুইবার তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের প্রশ্নে ইরান কোনো দ্বিধা বা বিলম্ব করবে না।

ইসরায়েলকে ‘রক্তচোষা’ এবং ‘পাগলা কুকুর’ বলেও আখ্যা দেন আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি। তিনি বলেন, তার দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘দৃঢ় ও শক্তিশালী’ পদক্ষেপ নিতে যা করা প্রয়োজন তাই করবে।

ভাষণের প্রথম অংশ ফারসিতে বলেন মি. খামেনি। এরপর একটি অংশে লেবানিজ এবং ফিলিস্তিনিদের উদ্দেশে আরবিতে কথা বলেন তিনি।

খামেনির ভাষণ শুনতে এবং তার ইমামতিতে নামাজ পড়তে আগে থেকেই পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল মসজিদ এবং আশেপাশের এলাকা। আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় নিহত হেজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ্ স্মরণে শোকসমাবেশের মধ্য দিয়ে।

খামেনি তার বক্তব্যে নাসরাল্লাহর প্রশংসা করেন। ওই অঞ্চল এবং পুরো মুসলিম বিশ্বকে ‘গুরুত্বপূর্ণ সেবা’ দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে হামাস এবং হেজবুল্লাহর প্রতি সমর্থন ফুটে ওঠে তার কণ্ঠে। মধ্যপ্রাচ্যের এই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রধান পৃষ্ঠপোষক ইরান।

ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ডের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য সামরিক ও সাংগঠনিক সহায়তা পেয়েই বিকাশ ঘটেছে হেজবুল্লাহর। তারা ইরানের একটি প্রতিরক্ষা ঢাল হিসেবে কাজ করে থাকে।

নিজেদেরকে প্রায়ই ‘অ্যাক্সিস অফ রেসিস্ট্যান্স’ (প্রতিরোধকারী পক্ষ) হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকে হামাস ও হেজবুল্লাহ। বিভিন্ন সময় ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে আসছে তারা। ইরান-ঘনিষ্ঠ সশস্ত্রগোষ্ঠীগুলো ইসরায়েলে সঙ্গে লড়াই থেকে পিছু হটবে না বলেও জানান মি. খামেনি।

উপস্থিত জনতার উদ্দেশে খামেনি বলেন, ইসরায়েল মঙ্গলবারের হামলার জবাব দেয়া চেষ্টা করলে আবারো প্রতিশোধ নেবে ইরান। “যদি ভবিষ্যতেও তেমন করার প্রয়োজন হয়, আমরা আবারও তাই-ই করবো,” বলেন আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি।

হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যুর পর পর দেয়া এক বিবৃতিতে ওই হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি। তারপরই ইসরায়েলে প্রায় দুইশো মিসাইল ছোঁড়ে ইরান।

হেজবুল্লাহ নেতা নাসরাল্লাহ নিহত হবার পর আয়াতোল্লাহ আলী খামেনিকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। রয়টার্সের এক খবরে বলা হয়, বৈরুতে হামলায় নাসরাল্লাহ নিহত হবার পর নিরাপত্তাজনিত কারণে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল খামেনিকে।

প্রকাশ্যে হাজির হওয়ার মধ্য দিয়ে আত্মগোপনে থাকার খবরকে নাকচ করার একটা বার্তা দেয়ার চেষ্টাও করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইসরায়েলে হামাসের হামলার এক বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে সাতই অক্টোবর। ওই হামলায় প্রায় ১২০০ জন মারা যান।

এর পর হামাসকে নির্মূল করতে উঠে পড়ে লাগে ইসরায়েল। গাজায় তাদের অভিযানে মারা যান ৪০ হাজারের বেশি মানুষ। যাদের একটি বড় অংশ নারী ও শিশু।

বর্তমানে পরিস্থিতি একটি আঞ্চলিক যুদ্ধের রূপ নিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে খামেনির ভাষণকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গেই দেখা হচ্ছে।

এদিকে, আরব বিশ্বের সুন্নি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো ইসরায়েলি হামলায় হেজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহর হত্যার প্রকাশ্য নিন্দা না করলেও, তারা লেবাননের সার্বভৌমত্ব নিয়ে কথা বলেছে।

এই সংঘর্ষের বিষয়ে কোনও কোনও আরব দেশ যেমন নীরব থেকেছে, কেউ কেউ আবার লেবানন-ইসরায়েলের সীমান্তে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।

জনপ্রিয় বিষয়

জনপ্রিয় সংবাদ

‘মুসলিমদের শত্রু অভিন্ন’- দীর্ঘদিন পর দেয়া জুমার খুতবায় খামেনি

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, মুসলিমদের শত্রু অভিন্ন এবং ইসরায়েলে চালানো ইরানের হামলা ছিল ‘ন্যূনতম শাস্তি’। প্রায় পাঁচ বছর পর জুমার নামাজের ইমামতি এবং খুতবায় দাঁড়িয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

শুক্রবার তেহরানের গ্র্যান্ড মোসাল্লা মসজিদে জুমার নামাজে অংশ নেন তিনি। এটি ২০২০ সালের পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতার প্রথম কোনো জনসমাগমে দেওয়া ভাষণ।

এতে তিনি বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের ঐক্যের ওপর জোর দেন। ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ কোরআনের নীতির ওপর ভিত্তি করে এই ঐক্য গড়ার কথা বলেন তিনি। আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি বলেন, একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র, লেবানন এবং অন্যান্য মুসলিম দেশ আর ইরানের শত্রু একই।

পদাধিকারবলে খামেনিই তেহরানের জুমার নামাজের খতিব। তবে, সাধারণত অধস্তনদের দিয়েই পালাক্রমে খুতবার দায়িত্ব পালন করান তিনি। বিশেষ দু’একটি ঘটনার সময়ই শুধু তাকে খতিবের দায়িত্বে আসীন হতে দেখা গেছে।

যেমন ২০২০ সালে জেনারেল কাসেম সোলেইমানির মৃত্যুর পর তিনি খুতবা দিতে এসেছিলেন। বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন সোলেইমানি।

তেহরানের মোসাল্লা মসজিদ

তখন সোলেইমানির মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় ইরাকে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালিয়েছিল ইরান। এরও আগে তিনি খুতবায় দাঁড়িয়েছিলেন ২০১২ সালে।

সে হিসেবে এবারেরটি গত এক যুগে তার তৃতীয় খুতবা। খামেনি তার বক্তব্যে, মঙ্গলবার ইসরায়েলে চালানো হামলার প্রশংসা করেন। ওই হামলাকে পুরোপুরি ‘বৈধ’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ইসরায়েলের ‘বিস্ময়কর সব অপরাধের’ বিরুদ্ধে ইরান যা করেছে সেটিকে ‘ন্যূনতম শাস্তি’ হিসেবেই দেখছেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা।

তিনি শুধু ধর্মীয় নেতাই নন, ক্ষমতা কাঠামোতেও তার অবস্থান সর্বোচ্চ। যে কারণে, খামেনির বক্তব্যই ইরানের নীতি সম্পর্কে ধারণা দেয়। ভাষণে দুইবার তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের প্রশ্নে ইরান কোনো দ্বিধা বা বিলম্ব করবে না।

ইসরায়েলকে ‘রক্তচোষা’ এবং ‘পাগলা কুকুর’ বলেও আখ্যা দেন আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি। তিনি বলেন, তার দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘দৃঢ় ও শক্তিশালী’ পদক্ষেপ নিতে যা করা প্রয়োজন তাই করবে।

ভাষণের প্রথম অংশ ফারসিতে বলেন মি. খামেনি। এরপর একটি অংশে লেবানিজ এবং ফিলিস্তিনিদের উদ্দেশে আরবিতে কথা বলেন তিনি।

খামেনির ভাষণ শুনতে এবং তার ইমামতিতে নামাজ পড়তে আগে থেকেই পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল মসজিদ এবং আশেপাশের এলাকা। আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় নিহত হেজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ্ স্মরণে শোকসমাবেশের মধ্য দিয়ে।

খামেনি তার বক্তব্যে নাসরাল্লাহর প্রশংসা করেন। ওই অঞ্চল এবং পুরো মুসলিম বিশ্বকে ‘গুরুত্বপূর্ণ সেবা’ দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে হামাস এবং হেজবুল্লাহর প্রতি সমর্থন ফুটে ওঠে তার কণ্ঠে। মধ্যপ্রাচ্যের এই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রধান পৃষ্ঠপোষক ইরান।

ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ডের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য সামরিক ও সাংগঠনিক সহায়তা পেয়েই বিকাশ ঘটেছে হেজবুল্লাহর। তারা ইরানের একটি প্রতিরক্ষা ঢাল হিসেবে কাজ করে থাকে।

নিজেদেরকে প্রায়ই ‘অ্যাক্সিস অফ রেসিস্ট্যান্স’ (প্রতিরোধকারী পক্ষ) হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকে হামাস ও হেজবুল্লাহ। বিভিন্ন সময় ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে আসছে তারা। ইরান-ঘনিষ্ঠ সশস্ত্রগোষ্ঠীগুলো ইসরায়েলে সঙ্গে লড়াই থেকে পিছু হটবে না বলেও জানান মি. খামেনি।

উপস্থিত জনতার উদ্দেশে খামেনি বলেন, ইসরায়েল মঙ্গলবারের হামলার জবাব দেয়া চেষ্টা করলে আবারো প্রতিশোধ নেবে ইরান। “যদি ভবিষ্যতেও তেমন করার প্রয়োজন হয়, আমরা আবারও তাই-ই করবো,” বলেন আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি।

হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যুর পর পর দেয়া এক বিবৃতিতে ওই হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি। তারপরই ইসরায়েলে প্রায় দুইশো মিসাইল ছোঁড়ে ইরান।

হেজবুল্লাহ নেতা নাসরাল্লাহ নিহত হবার পর আয়াতোল্লাহ আলী খামেনিকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। রয়টার্সের এক খবরে বলা হয়, বৈরুতে হামলায় নাসরাল্লাহ নিহত হবার পর নিরাপত্তাজনিত কারণে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল খামেনিকে।

প্রকাশ্যে হাজির হওয়ার মধ্য দিয়ে আত্মগোপনে থাকার খবরকে নাকচ করার একটা বার্তা দেয়ার চেষ্টাও করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইসরায়েলে হামাসের হামলার এক বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে সাতই অক্টোবর। ওই হামলায় প্রায় ১২০০ জন মারা যান।

এর পর হামাসকে নির্মূল করতে উঠে পড়ে লাগে ইসরায়েল। গাজায় তাদের অভিযানে মারা যান ৪০ হাজারের বেশি মানুষ। যাদের একটি বড় অংশ নারী ও শিশু।

বর্তমানে পরিস্থিতি একটি আঞ্চলিক যুদ্ধের রূপ নিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে খামেনির ভাষণকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গেই দেখা হচ্ছে।

এদিকে, আরব বিশ্বের সুন্নি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো ইসরায়েলি হামলায় হেজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহর হত্যার প্রকাশ্য নিন্দা না করলেও, তারা লেবাননের সার্বভৌমত্ব নিয়ে কথা বলেছে।

এই সংঘর্ষের বিষয়ে কোনও কোনও আরব দেশ যেমন নীরব থেকেছে, কেউ কেউ আবার লেবানন-ইসরায়েলের সীমান্তে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।

জনপ্রিয় ক্যাটাগরি

জনপ্রিয় সংবাদ